প্রেমের চিঠি
– দেসা মিশ্র
বেশি তো কিছু চাই নি, চেয়েছিলাম দু’জনে এক সাথে গান শুনবো রাত জেগে কিম্বা আঙুলে আঙুল ছুঁয়ে তারাদের উষ্ণতা মাপবো। ঘুম না আসা রাতে কিছু গল্প বুনবে তার ঠোঁট –
আমি জড়িয়ে নেবো ঘুম চাদর তার শব্দে শব্দে।
তুমি বড্ড বেশি চাও বুঝলে? …. আয়নার ওপার থেকে আওয়াজ এলো,
আমি সোজা হয়ে মন দিলাম,
অগোছালো চুল চোখের নিচে কালি
চোখে স্বপ্নের হাজার হাজার লাশ
আমি তবু দাঁড়িয়ে?
এত সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে?
ও পার থেকে আওয়াজ এলো…
এতো সুখ চাস তুই?
তোর এত সাধ?
কেন রে মেয়ে কেন?
ভালোবাসা কি এতই সস্তা তোর মত এত সামান্য রূপ রঙ বুদ্ধিহীন মেয়েও পাবে?
ও তাই বুঝি? শুনে কাঁদতে লাগলাম আমি।
সে আবার চিৎকার করে বললো নিজেকে ভালোবাসিস?
বেসেছিস কোনো দিন??
আমি নীরব হয়ে ভাঙতে শুরু করলাম দেখলাম পা দুটো টলমল করছে অবশ হয়ে আসছে।
সে আবার বললো জীবনটাকে ভালোবেসে দেখ একবার, দেখ একবার পৃথিবী পানে চেয়ে,
ওই যে শালুক ফুটে, দে তো খোঁপাতে গুঁজে,
মেঘের কাজল পর, বৃষ্টি গায়ে মাখ…
চুড়ির শব্দে শব্দ আসবে – কবিতা লেখ।
সূর্য তোর কপালে আঁকছে টিপ – তাকে হৃদয় ছুঁতে দে।
আলো ভরে যাক অঙ্গ জুড়ে
এবার হাস তো দেখি নদী সেজে….
প্রকৃতি তোর আসল প্রেমিক তুইও নিখুঁত প্রেমিকা।
আমি চোখ মেলে দেখি আমার দু’ চোখের মাঝে সূর্য, আমার একদিকে সবুজ, ফুল ফল মায়া প্রেম, অন্য দিকে বিশ্বাস নদী পাহাড় সমুদ্র।
আয়নার ওপার থেকে আওয়াজ এলো আবারো- কি রে মেয়ে কেমন আছিস?
আমি চিৎকার করে উঠলাম বললাম, আমি বুঝেছি আমি বুঝেছি তুমি ফিরে যাও।
চিৎকার করে বললাম আমার মতো সুখী কে আছে?
কেউ নেই, কেউ নেই।
চোখের ভেতর কার স্বপ্নের লাশগুলো প্রাণ পেয়ে রঙ ধনু মেখেছে সারা গায়ে।
আজ উৎসব তাদের।
আয়নার সামনে সেই অগোছালো চুলের মেয়েটি সোজা হয়ে দাঁড়ালো মাথা উঁচু করে…
দরজা খুলে খোলা মাঠের দিকে ছুটে গেলো – ছুটে গেল,
আকাশের দিকে ছুড়ে দিলো তার মন কবিতাদের জিজ্ঞেস করলো- ভালোবাসো? আমায় ভালোবাসো? ।
সঙ্গে সঙ্গে শীতল বৃষ্টি নামলো ফুলের সুবাস মেখে ।
মেখে নিল সারা গায়ে, এক একটা ফোঁটা থেকে সুর গান কবিতারা জন্ম নিলো,
মেয়েটি বুঝে নিল উত্তর এসেছে, এসেছে… প্রেমের চিঠি।
চুল ঠোঁট হৃদয় থেকে সেই মাটি অব্দি যেখানে আমার পা নরম ঘাসে অঙ্গ অঙ্গ জুড়ে আঁকা আছে আলো শুধু আলো, বিন্দু বিন্দুতে লেখা আছে ভালোবাসি ভালোবাসি।